তালিবে ইলমদের মা’মূলাত ও জরুরী নসীহত

মাওলানা আব্দুল মতীন বিন হুসাইন
(পীর সাহেব, ঢালকানগর)

১। সর্বদা সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে। চোখের দ্বারা, হাতের দ্বারা, জবানের দ্বারা, অন্তরের দ্বারা এবং কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দ্বারা যেন কোন গুনাহ না হয়। এমন কোন কাজ না করা যার কারণে আল্লাহপাক নারাজ হয়ে যান। বিশেষত নারী ও সুশ্রী ছেলেদের প্রতি কুদৃষ্টি থেকে এবং গীবত ও অন্যের দোষ চর্চা থেকে বেঁচে থাকবে। নিজ জীবনে ও নিজের ঘরে শরয়ী পর্দার প্রতি যত্নবান হওয়া চাই।

২। পড়বে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির নিয়তে। মেহনত করে পড়াশোনা করবে। রীতিমত সবকে হাযির থাকবে। অনুপস্থিত থাকবে না। সবকের পূর্বে মোতালাআ করবে। সবকের সময় ওস্তাদের তাকরীর (আলোচনা) মনোযোগ সহকারে শুনবে। কোন বিষয় না বুঝে থাকলে ঐদিনই তা বুঝে নিবে। সবকের পর অবশ্যই তাকরার করবে।

৩। সুযোগ্য আলেমেদ্বীন হবার লক্ষ্যে খুব মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করা চাই।

৪। বাবা-মা, ওস্তাদ, উলামায়ে কেরাম এবং দ্বীনী কিতাবাদির আদব রক্ষা করে চলবে। আদব ছাড়া দ্বীনী ইলম নসীব হয় না।

৫। সকল ক্ষেত্রে সুন্নত মোতাবেক আমলের প্রতি যত্নবান হবে। নখ বড় রাখবে না। নিয়মিত মিসওয়াক করবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি লহেয়াল রাখবে। শরীর, জামা-কাপড়, বিছানাপত্র, থালা-বাটি, জগ-গ্লাস ইত্যাদি পরিষ্কার রাখবে।

৬। সারাদিন ওজু-ইস্তিঞ্জা, খাওয়া ও পান করা, পোশাক পরা, ঘুমানো ও ঘুম থেকে ওঠাসহ সর্ব হালতের মাসনূন দোয়াগুলো পড়ার প্রতি যত্নবান হবে।

৭। তোমার দ্বারা কেউ যেন কষ্ট না পায়, অপমানিত না হয়, পেরেশান না হয়। এবং সাথীদের প্রতি কোনরূপ দুর্ব্যবহার যেন না হয়।

৮। কোনরূপ হারাপ সম্পর্ক ও ভালবাসায় জড়িয়ে পড়বে না। এতে মান-ইজ্জত, দ্বীন এবং দোজাহান বরবাদ হয়।

৯। উচ্ছৃঙ্খলতা ও পাপাত্মক আড্ডা এবং অসৎ সঙ্গ থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে।

১০। বাতিলপন্থীদের কোন বই পড়বে না। কারণ এতে নিজের অজান্তেই আত্মা ও দ্বীনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়।

কারো জিনিস বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করবে না। একান্ত প্রয়োজনে আন্তরিক সন্তুষ্টির সাথে অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা যেতে পারে।

১১। নিজের ইজ্জত ও সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখবে। এমন কোন কাজ করবে না যার পরিণামে অপমানিত হতে হয়।

১২। সুস্বাস্থ্য বড় নেয়ামত। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি যত্নশীল হবে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষয়াদি হতে অবশ্যই বিরত থাকবে।

১৩। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) তালেবে এলমদেরকে দীর্ঘ নফল, দীর্ঘ অজীফা হতে বারণ করেছেন। অবশ্য শায়খুল হাদীছ মাওলানা জাকারিয়া সাহেব (রহঃ) বলেছেন, এই যামানায় তালেবে এলেমদেরও কিছু যিকির করা উপকারী হবে। (যার পরিমাণ হওয়া চাই খুব সংক্ষিপ্ত, যাতে এলমেদ্বীন হাসিলের মেহনতে বিঘ্ন না ঘটে, স্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনীয় বিশ্রামেও ব্যাঘাত না ঘটে।)

১৪। তাই জিকির করতে ইচ্ছা হলে প্রথমে কয়েকবার এস্তেগফারের পর খুব মনোযোগ সহকারে ১০০ বার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” জিকির করবে। তারপর ১০ বার এস্তেগফার, ১০ বার দরূদ শরীফ পড়বে। (সবক, তাকরার ও মোতালাআর সময়ে নয়, বরং ফাঁকা সময়ে।)

১৫। বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব বিসমিল্লাহ্‌সহ সূরা এখলাস, ফালাক্ব ও নাস ৩ বার করে পড়বে। حَسْبِيَ اللهُ لَاۤ اِلهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَ هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ ৭ বার পড়বে। أَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ  সহ সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত একবার, اللهُمَّ أَجِرْنَيْ مِنَ النَّارِ ৭ বার এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ছোট দরূদ اللهُمَّ صَلِّ عَلى النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ ২০ বার করে পড়বে, এতে রোজ ১০০ বার হবে।

১৬। এশার সুন্নতের পর বেতেরের আগে দুই রাকাত করে চার রাকাত বফল নামায পড়বে। প্রথম দুই রাকাতে তাওবা ও তাহাজ্জুদের নিয়ত করবে (সালামের পর মোনাজাতে আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট অতীতের ভুল ত্রুটি হতে তাওবা করবে।) , পরের দুই রাকাতে ছলাতুল হাজত ও তাহাজ্জুদের নিয়ত করবে (সালামের পর মোনাজাতে নিজের ও পরিবারের সকলের ইসলাহ, তাকওয়ার হায়াত, দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণ ও কামিয়াবি এবং সকল নেক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দোয়া করবে)।

বিশেষ উপদেশঃ চোখের হেফাজত, জবানের হেফাজত এবং হারাম সম্পর্ক হতে হেফাজত তালেবে এলেমকে বহু উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দিবে ইনশাআল্লাহ্‌।

তিনটি গুণ অর্জন করতে পারলে আল্লাহ্‌র ওলী হতে পারবো -

(১) তাকওয়া (সর্বদা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, গুনাহ হলে তাওবা-এস্তেগফার করা) ।

(২) বেশি বেশি আল্লাহ্‌র জিকির করা।

(৩) সুন্নতের অনুসরণ করা।

Previous Post Next Post